সত্যিই বন্ধু নাকি ছদ্মবেশী শত্রু?

সুন্দর এ পৃথিবীতে নিঃসঙ্গতাকে ভয় পাই সবাই। খুব মায়াময় এক দৃশ্য উপভোগ করার মুহূর্তটি, আপনার কাউকে খুব বলতে ইচ্ছে করছে। মানসিকভাবে ভেঙে যখন তলিয়ে যাচ্ছেন, তখন প্রিয় মানুষের সহানুভূতির স্পর্শ পেতে ইচ্ছে হবে। সত্যি বলতে এই মানব সভ্যতা সমাজ, পরিবার, বন্ধু ছাড়া বেচে থাকতে পারেনা।

আর এখানেই এই পৃথিবীর অন্যান্য প্রাণের সাথে মানবসত্তার পার্থক্য। আমরা সবাই চাই কাছের কোনো বন্ধু থাকুক। যে সবসময় কাছে থাকবে মন খারাপে অথবা সুখে মোড়ানো মুহূর্তে। কিন্তু আসলে আমরা চিনবো কি করে যাকে কাছের ভাবছি সে সত্যিই আমাকে ততোটা ভাবছে কি না? চলুন জেনে নেই এমন কিছু বিষয়, যা আমাদের ইঙ্গিত দিবে সে সত্যিই বন্ধু নাকি ছদ্মবেশী শত্রু?

সব বিষয়েই একটা `কিন্তু` যোগ করা :
আপনার বন্ধুটি আপনার সবকিছুই খুব মনোযোগ দিয়ে দেখবে। আপনার সদ্য কেনা গাড়িটি, আপনার করা চমৎকার পেইন্টিংঅথবা আপনার সুন্দর বাড়িটিই ঘুরে ঘুরে দেখবে। বিভিন্ন মন্তব্য করবে, যা আপনাকে আনন্দিত করবে। কিন্তু একটা সময় বলতে শুরু করবে গাড়ির রঙ টি বরং কালো হলেই ভালো হতো। লালটা কেমন ক্যাটকেটে দেখায়। অথবা বলবে তোর বাগান টা তো ভারি সুন্দর। কিন্তু কি ফুল যেনো নেই নেই লাগছে।

জর্জিয়ার রাজধানী আটলান্টা শহরের সাইকোলজিস্ট জার্ড ডিফাইফ বলেন, সমালোচনা খুব ধীরগতি কিন্তু দৃঢ়ভাবে একটি সম্পর্কের জন্য ক্ষতিকর। যদি আপনার বন্ধুটি প্রতিনিয়ত ভুল ধরা শুরু করে, আপনি খুব ভালো সম্বোধন করে প্রশ্ন করবেন ঠিক কোন জায়গায় ভুল ছিলো। আপনি খুব অবাক হবেন দেখে যে, সে ঠিকঠাক কোনো কারণ দেখাতে পারবে না।

ডিফাইফ আরো বলেন, আপনার উচিত কিছু সীমাবদ্ধতা নিয়ে আসা, এবং পর্যবেক্ষন করা। আপনার খুব আনন্দের সংবাদে আপনার কোন বন্ধুটি অনেক উচ্ছ্বাসিত হয়েছে আর কোন বন্ধুটি ভেজা বিড়ালের মতো লুকিয়ে সমালোচনায় মগ্ন হচ্ছে সেটা আপনি খুব সহজে ধরতে পারবেন।

সে কখনো কোনো খোজ নিবে না অথবা আমন্ত্রণ জানাবে না :
মনে পড়ে সেই ছেলেবেলার কথা? আপনার সবচাইতে কাছের বন্ধুটির সাথে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথা বলার সময়টুকু? খুব সুখের মুহূর্ত সেসব স্মৃতি। এটা ঠিক টেকনোলোজির আধুনিকতা আপনাকে সারাক্ষণ আপনার প্রিয় মানুষদের মধ্যে সান্নিধ্যে এনে দিচ্ছে। কিন্তু এর ওপর পিঠটা হলো এতে কিন্তু অনেকে বিচ্ছিন্নও হয়ে যাচ্ছে। যখন লক্ষ্য করবেন আপনার বন্ধুটি বেশ কিছুদিন আপনার জন্য সময় বের করে একটু সময় দিচ্ছে না, খোজ খবর নিচ্ছে না, তাতে কিন্তু আপনি ভয়ানক কষ্ট পাবেন। আপনার মনে হবে সে আসলে আর আমাকে যত্ন ই নিচ্ছে না।

বেস্ট ফ্রেন্ড ফরেভারের কর্তৃপক্ষ ইরিনি এস লেভিন বলেন, যদিও আমরা প্রতিনিয়ত ই কারো না কারো সাথে চ্যাট বক্সে ব্যস্ত থাকি কিন্তু আমাদের অবশ্যই ব্যক্তিগত ভাবে আমাদের কাছের মানুষের সাথে আলাদা করে যোগাযোগ রাখতে হবে। এতে সম্পর্কের গুরুত্ব বৃদ্ধি পায়। এতে বুঝা যায় আমি তোমাকে এতোটা কেয়ার করি যে শত ব্যস্ততার ভিড়ে আমার তোমাকে মনে পড়েছে। যদি আপনি দেখতে পান আপনার বন্ধুটি কয়েক মাসের মধ্যে একবারো আপনাকে কল দিয়ে লম্বা সময় নিয়ে কথা বলছে না, তাহলে আপনি ধরে নিন সে আসলে আপনাকে কেয়ার করছে না। সে যদি আপনার কাছাকাছি থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই তার উচিত সময় করে আপনার সাথে দেখা করে যাওয়া। নতুবা আপনি ভেবে নিন আপনার ভালো বন্ধুটি বাছাইয়ের সিদ্ধান্তের কথা।

সে কখনো কৃতিত্বের জন্য আপনাকে সম্মান জানাবে না :
কর্মজীবি মায়েদের বন্ধুরা খুব সহজে বলে দিতে পারে যে আপনার সময়টুকু কাটে শুধুমাত্র আপনার বাচ্চাদের সাথে সময় কাটিয়ে। এতে আসলে একধরণের ঈর্ষাই প্রকাশ পায়। আপনার বন্ধুটি হয়তো সে সময় টাতেই আপনার সবকিছু তাল মিলিয়ে চলা খুব আশ্চর্য বোধ করছে অথবা খারাপ অনুভব করছে। সে তার নিজেকে ক্ষান্ত দেয়ার জন্য কোনো এক অবসর সকালে, দিনের দ্বিতীয় চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে আপনার অক্ষমতা নির্ধারন করার চেষ্টা করে নিজেকে প্রশান্তি দেয়ার চেষ্টা করবে। আপনার বন্ধুটি কখনোই আপনার বাইরের জীবনের কঠোর পরিশ্রম, বাড়ি দেখাশোনা, বাচ্চাদের বড় করে তোলা এসবকিছুর কৃতিত্বকে স্বীকৃতি দিবে না। সে সবসময় ই আপনাকে বুঝাতে চাইবে এটা খুব পুরোতন ট্রেন্ড এবং আপনাকে নিরুৎসাহী করার চেষ্টা করবে। খুব সম্ভব এইটুক যথেষ্ট আপনার বন্ধু রূপী অথচ একজন প্রতিপক্ষকে।

আপনার ব্যর্থতা নিয়ে ঘাটাঘাটি করবে বেশি :
বিশেষত যখন আপনি খুব অস্থিরতায় দিন কাটাবেন তখন খুব স্বাভাবিকভাবে বন্ধুরা আপনাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসবেন, আপনার কাছে সব জানতে চাইবেন। কিন্তু অবশ্যই সব বিষয়ে প্রশ্ন করার কিছু সুন্দর পথ আছে। কিন্তু এমনও হতে পারে আপনার বন্ধুটি আপনাকে নাছোড়বান্দা করে ছাড়বে আপনার হতাশার কারণ বারংবার জানতে চেয়ে। যেমন আপনি যদি নব্য বিবাহিত হোন, সে বারবার আপনার পুরোতন প্রেমিক নিয়ে প্রশ্ন করবে যা আপনার বিবাহিত স্ত্রীর সামনে আপনাকে বিব্রত করে তুলবে। সাইকোলজিস্টরা সাধারণত খুব সম্ভব হলে এসব বন্ধুদের এড়িয়ে চলারই পরামর্শ দিয়ে থাকেন।